উদ্বেগ – জেনারেল অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার | General Anxiety
বর্তমান জীবনে চলার পথ খুব একটা মসৃণ নয়। তাই আমরা যেকোন বিষয়ে আজকাল বড্ড বেশি চিন্তা করে থাকি। একেই সাধারণত উদ্বেগ বলা হয়ে থাকে। কিন্তু বাইরে থেকে আমরা কেউই বলতে পারি না যে এই উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা কি শুধুই গভীর চিন্তা করা নাকি এটা আমাদের অজান্তেই একটা মানসিক রোগ বা ডিজঅর্ডারে পরিণত হয়েছে। আজ আমরা অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার নিয়ে আলোচনা করব এবং এই রোগ থেকে কীভাবে নিজেদের বাঁচাব সেই বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা করব।
দুশ্চিন্তা বা অ্যাংজাইটি আমাদের প্রতিদিনকার জীবনে খুবই স্বাভাবিক, এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা জরুরিও বটে। আসলে দুশ্চিন্তা হল আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক যখন কোনো বিষয় কে খুব গূরুত্ব দেয় তখন তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা শুরু করে। আমাদের প্রিয়জন যাদের আমরা খুব ভালোবাসি, চাকরি বা কর্মক্ষেত্রে ঘটা কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই দুশ্চিন্তা খুব বেশি করে হয়।
“যখন চিন্তা আমাদের পুরোপুরিভাবে গ্রাস করে”
জেনারেল অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার কী
বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো বিষয়ে যখন আমরা প্রচন্ড চিন্তা করতে থাকি, সারাদিন রাত তা নিয়ে ভাবতে থাকি, কিছুতেই সেই চিন্তা থেকে বেরোতে পারি না তখন তাকে জেনারেল অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার বা Generalized anxiety disorder (GAD) বলে। [তথ্যসূত্র উইকিপিডিয়া/Wikipedia]
নীচে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হল। এর মধ্যে যদি একটাও তোমার মানসিক অবস্থার সঙ্গে মিলে যায় তাহলে তোমার মধ্যে কিছু পরিমাণে হলেও জেনারেল অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার আছে।
- হঠাৎ করে এবং খুব সহজেই কোনো বিষয় নিয়ে খুব গভীর চিন্তা শুরু হয়ে যাওয়া।
- চিন্তাটাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারা ও তাই নিয়ে সারাক্ষণ ভেবে চলা।
- কোনো তুচ্ছ বিষয় নিয়েও গভীর চিন্তা করা।
এই ধরণের উপসর্গগুলি যদি ৬ মাসের বেশি থাকে তাহলে তাকে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাও।
জেনারেল অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার এবং প্যানিক ডিজঅর্ডারের উপসর্গগুলো প্রায় একইরকম কিন্তু এটাও মাথায় রাখতে হবে যে প্যানিক করা বা দুশ্চিন্তা করা কিন্তু আমাদের রোজকার ঘটনাবহুল জীবনে খুবই স্বাভাবিক। যতক্ষণ না তা বাড়াবাড়ি রকমের পর্যায়ে চলে যাচ্ছে ততক্ষণ এগুলি কোনো ডিজঅর্ডার নয়।
“জেনারেল অ্যাংজাইটি বা দুশ্চিন্তা মুক্ত হওয়া খুব একটা কঠিন নয়।”
জেনারেল অ্যাংজাইটি – বিভিন্ন উপসর্গ
মানসিক উপসর্গ
- চিন্তা বন্ধ করতে না পারা
- সমস্ত বিষয়ে চিন্তা করা
- খুব বেশি করে চিন্তা করা
- সবসময় কোনো ঘটনা কতদূর পর্যন্ত বাজে হতে পারে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করা
- চেনা ছকে চলতে এত বেশি অভ্যস্ত হয়ে পড়ে যে চেনা ছকের বাইরে বেরোতে খুব ভয় পায়
- সবকিছুর মধ্যেই বিপদ দেখতে পায়
- অচেনা, অজানা বিষয় সম্পর্কে প্রচন্ড ভয় পায়
- ভয়ের চোটে কোনো বিষয় সম্পর্কে নিজে থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, ভাবে যদি ভুল হয়ে যায়
- সবসময় একটা অস্থির অস্থির ভাব
- কোনো বিষয় সম্পর্কে মনোযোগ দিতে গেলে মাথা পুরো ফাঁকা হয়ে যায়
- অন্য লোকের জায়গায় নিজেকে দাঁড় করিয়ে নিজেই নিজেকে দেখতে পারে।
শারীরিক উপসর্গ
জেনারেল অ্যাংজাইটির কারণে শরীরেও বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনিদ্রা বা ঘুমের সমস্যা, সবসময় ক্লান্তি ভাব, মাথার যন্ত্রণা, খুব ঘাম হওয়া, সহজেই বিচলিত হওয়া, খুব রাগ হওয়া বা সহ্যশক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদি।

ভয়ের চোটে যেখানে সেখানে পেট খারাপ / Irritable Bowel Syndrome
জেনারেল অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার ও Irritable Bowel Syndrome ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। এই ডিজঅর্ডার থাকলে রোগী যখনই কোনো বিষয় নিয়ে খুব বেশি চিন্তা শুরু করে দেয় তখনই তার সঙ্গে সঙ্গে পায়খানা পেয়ে যায়। সে সেই মুহূর্তে যেকোন শৌচালয় বা বাথরুমে যেতে বাধ্য হয়। অনেক সময় রোগীর বমিও হতে পারে।
এই সমস্যা যখন দেখা দেয় তখন রোগীকে যেভাবে হোক বাথরুমে যেতেই হবে। রোগীর জন্য এই মুহূর্তটা ভারি অস্বস্তির বিশষত কাজের জায়গায় বা সামাজিক মেলামেশায়। ফলত রোগীকে কোনো বিষয় নিয়ে যেমন দুশ্চিন্তা করতে হয়, এই সমস্যাটা নিয়েও তাকে একই ভাবে চিন্তা করতে হয়। ফলত রোগী একই পথে বৃত্তাকারে ঘুরতে থাকে। যদিও এটা তেমন কঠিন কোনো বিষয় নয়। খুব সহজেই এর থেকে সেরে ওঠা সম্ভব।
তবে এই ধরণের উপসর্গ দেখা দিলেই যে সে Irritable Bowel Syndrome এ আক্রান্ত, তা কিন্তু নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা স্বাভাবিক, তা আমাদের সকলেরই হয়ে থাকে। 😀 তা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু যদি এই সমস্যা সবসময় হয়ে থাকে তখন অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগের অতি পরিচিত কিছু কারণ
-
- শারীরিক সমস্যা
- মৃত্যু
- পরিবার নিয়ে চিন্তা
- সম্পর্কের টানাপোড়েন
- অর্থনৈতিক অবস্থা
- কাজের পরিবেশে মানিয়ে নেওয়া
- কাজের দায়িত্ব
এই রোগ থেকে বাঁচতে চাইলে উপরে উল্লিখিত বিষয়গুলি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা কমাতে হবে। চিন্তা কমানোর অনেক উপায় আছে। তবে যেটা অবশ্যই ভাবা বন্ধ করতে হবে তা হল যে কোনো বিষয় সম্পর্কে চিন্তা করতে গিয়ে সবথেকে খারাপ কি হতে পারে তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা বন্ধ করে দিতে হবে। যাই হয়ে যাক ওই নিয়ে ভাবা যাবে না।
জেনারেল অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার কেন হয়
কিছু কিছু বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জিনগত কারণে এই রোগটি হয়ে থাকে। কিন্তু তা বলা খুবই কঠিন কারণ বর্তমানে যে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা প্রত্যেকে লড়াই করে চলেছি, আমরা কীভাবে বুঝতে পারব যে আমাদের মায়ের যে সবসময়ের চিন্তা করার অভ্যাস তা স্বাভাবিক নাকি কোনো রোগ? বলা সত্যিই খুব কঠিন।
এই ব্যাপারে চিকিৎসকের মতামতই কাম্য। তবে বেশিরভাগ চিকিৎসকদের মতে যারা বেশি দুশ্চিন্তা করে তাদের ব্রেইনের কর্মক্ষমতা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। আমাদের এই যে ভয়, চিন্তা, আবেগ তা মস্তিষ্কের সামনের দিকে হয়ে থাকে। এই অংশটা অ্যামিগডালা, ইনসুলা ও ফ্রন্টাল কর্টেক্স নামে পরিচিত। মস্তিষ্ক বা ব্রেইন স্ক্যান করলে দেখতে পারতে রোগীর এই অংশটা আকাশে আতসবাজি ফাটার মতই ঝলমল করছে কারণ রোগীর মধ্যে ভয়,চিন্তা, আবেগ সবথেকে বেশি কাজ করে তাই।
“যারা দুশ্চিন্তায় ভোগে তাদের মস্তিষ্ক কিন্তু সাধারণ মানুষের তুলনায় অনেক বেশি কাজ করতে পারে, কিন্তু দুঃখের বিষয় এটাই যে তাদের সব ক্ষমতাই একদম জলে চলে যাচ্ছে।”
জেনারেল অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার কীভাবে সারানো সম্ভব
বেশিরভাগ জেনারেল অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার সি.বি.টি. বা কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপির (cognitive behavioral therapy (CBT)) সাহায্যেই ঠিক হয়ে যেতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে নিজের প্রিয়জনের সঙ্গে মন খুলে এই ব্যাপারে কথা বললেই দুশ্চিন্তার সমস্যাটা অনেকাংশেই ঠিক হয়ে যায়। এখন এই সমস্যার মোকাবিলার জন্য অনেক সামাজিক গ্রুপ খোলা হয়েছে যেখানে যে কেউ মন খুলে কথা বলে নিজেকে ভারমুক্ত রাখতে পারবে।
তবে রোগ অনেক গভীরে গিয়ে থাকলে শুধু কথা বলে ঠিক হবে না সেই ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শমতো কিছু ওষুধ হয়ত খেতে হতে পারে। এখন অনেক ধরণের ওষুধ বেড়িয়ে গেছে যেগুলো খেয়ে রোগী অনেকটাই ভালো থাকে। এছাড়াও কিছু থেরাপি যেমন ম্যাসাজ বা রিল্যাক্সিং মিউজিক রোগীকে অনেকটাই শান্ত থাকতে সাহায্য করে। শুধুমাত্র দিনের শেষে তোমার নিজের উপর বিশ্বাস থাকতে হবে।
আমরা পরের লেখায় এই জেনারেল অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার কীভাবে সরানো যেতে পারে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
সতর্কীকরণ
জেনারেল অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার কিন্তু চিকিৎসা না করালে ধীরে ধীরে রোগীর জীবনকে সম্পূর্ণ ভাবে গ্রাস করে নিতে পারে। যদি তোমার মনে হয় যে তোমার পরিচিত কারোর এই সমস্যা আছে তাহলে দেরী না করে সঙ্গে সঙ্গে লাইসেন্স প্রাপ্ত চিকিৎসকের (সাইকোলজিস্ট বা সাইকিয়াট্রিস্ট) কাছে নিয়ে যাও।
Thanks for the excellent post…
Great post! We will be linking tto this great
post on our website. Keep up the great writing.
I enjoy reading throhgh your website. Thanks!
Good day! Would you mind if I share your blog with my twitter group? There’s a lot of people that I think would really enjoy your content. Please let me know. Many thanks
Generally I don’t read article on blogs, but I would like to say that this write-up very forced me to try and do so! Your writing style has been amazed me. Thanks, quite nice article.
Good write-up, I am regular visitor of one抯 web site, maintain up the nice operate, and It is going to be a regular visitor for a long time.