ডিপ্রেশন কী, কেন ও মুক্তির উপায়

আমরা রোজকার কথাবার্তায় প্রায়ই বলে থাকি যে জানিস তো আজ না আমার মনটা খুব খারাপ। রোজদিনকার কাজের চাপে আমরা বিষয়টাকে খুব হাল্কাভাবে পাশ কাটিয়ে গেলেও এই মন খারাপ যদি বেশ কিছুদিনের সঙ্গী হয় তাহলে বুঝতে হবে যে এটা নিছক মন খারাপ নয়। এটা আসলে ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা। যাকে আমরা মন খারাপ বলে বা ভেবে ভুল করি। বর্তমান সময়ে এই ডিপ্রেশন আমাদের নিত্য সঙ্গী। স্থূলতা বা মোটা হয়ে যাওয়ার মত এই ডিপ্রেশন কিন্তু আমাদের শরীর আর মনের জন্য গুপ্তঘাতক।

“ডিপ্রেশন নিছক মন খারাপ নয়”

ডিপ্রেশন কী?

ডিপ্রেশন এক ধরণের মানসিক সমস্যা। সবসময় একটা মন খারাপ, রাগ, হারানোর ভয় মনের মধ্যে লেগেই থাকে। এই সমস্যাটা এখন ঘরে ঘরে।  Centers for Disease Control and Prevention (CDC) এর মতে শতকর ৮০ শতাংশ মানুষ ডিপ্রেশনে রয়েছে। মানুষের ডিপ্রেশনে ভোগার ধরণও বিভিন্ন। ডিপ্রেশনের কারণে রোগীর প্রতিদিনকার কাজে খুবই অসুবিধা হয়। 

কত রকমের ডিপ্রেশন হতে পারে?

    1. মেজর ডিপ্রেশন (Major depression)
    2. পার্সিসটেন্ট ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার (Persistent depressive disorder)
    3. বাইপোলার ডিজঅর্ডার (Bipolar disorder)
    4. সাইকোটিক ডিপ্রেশন (Psychotic depression)
    5. পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন (Postpartum depression)

ডিপ্রেশন হয়েছে বুঝব কী ভাবে?

    • সবসময় মন খারাপ
    • কোনো কাজকর্মে মন বসে না
    • কোনো কিছুতেই আনন্দ পাওয়া যায় না
    • যৌন চাহিদার অভাব
    • খিদে পায় না
    • ওজন বাড়া,কমা
    • বেশিরভাগ সময়ে ঘুমিয়ে কাটানো অথবা একেবারেই না ঘুমানো
    • সবসময় একটা অস্থির অস্থির ভাব
    • কথা বলার কমে যাওয়া
    • বেশি নড়াচড়ার ইচ্ছে না থাকা
    • কোনো কাজেই এনার্জি না থাকা
    • মনোযোগের অভাব
    • সবসময় ক্লান্ত লাগা
    • কোনো কিছুর সঙ্গেই নিজেকে একাত্ম করতে না পারা

মহিলাদের মধ্যে ডিপ্রেশনের যে যে উপসর্গগুলো বেশি দেখা যায় তা হল –

    • সবসময় বিরক্তির ভাব
    • উদ্বেগ
    • মুড সুইং
    • সবসময় ক্লান্ত লাগা
    • সবসময় কিছু না কিছু ভাবা

“ছেলেদের আবার মন খারাপ হয় নাকি?”

ছেলেদের মধ্যে ডিপ্রেশনের যে যে উপসর্গগুলো বেশি দেখা যায় তা হল –

    • পরিবার ও যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠান কে এড়িয়ে চলা
    • কোনো রকম বিরতি না নি্যেই একটানা কাজ করে যাওয়া
    • কাজের ও পরিবারের দায়িত্ব নিতে ভয় পাওয়া
    • ব্যক্তিগত সম্পর্কে সারাক্ষণ ঝগড়া, রাগারাগি করে থাকে

শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডিপ্রেশনের যে যে উপসর্গগুলো বেশি দেখা যায় তা হল –

    • পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ দিতে না পারা
    • না ঘুমাতে পারা বা অনিদ্রা
    • খুব বেশি ঘুমানো
    • কখনো কখনো খিদে না পাওয়া আবার কখনো কখনো প্রচন্ড খিদে পাওয়া।
    • যেকোনো সামাজিক মেলামেশা করতে ভয় পাওয়া

ডিপ্রেশনের কারণ

শুধুমাত্র একটা বা দুটো কারণের জন্য ডিপ্রেশন দেখা দেয় না। চারপাশের পরিবেশ, ঘরের পরিবেশ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে ডিপ্রেশন হয়ে থাকে। তবে মূল কারণগুলি হল –

    1. জিনগত
    2. স্নায়ুর সমস্যা হলে
    3. পরিবেশের কারণে
    4. মানসিক কারণে বা সামাজিক পরিবেশের কারণে
    5. এছাড়া অন্যান্য কারণ যেমন, বায়পোলার ডিজঅর্ডার (bipolar disorder)

ডিপ্রেশনের মূল কারণ

    1. বিভিন্ন ধরণের সমস্যার মধ্যে জড়িয়ে পড়া, যেমন, পরিবারে অশান্তি, প্রিয়জনের মৃত্যু, সম্পর্কের অবনতি
    2. চিকিৎসা চলাকালীন ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া
    3. বিভিন্ন ধরণের রোগের কারণে যেমন অতিরিক্ত মোটা হওয়া, হৃদরোগ বা হার্টের অসুখ হলে, ডায়াবেটিস হলে

“শুধুমাত্র সহানুভূতি নয়, দরকার সহমর্মিতা”

চিকিৎসা কী সম্ভব?

ডিপ্রেশনের চিকিৎসা অবশ্যই সম্ভব।

পাশে দাঁড়ানো – মানসিক ভাবে রোগী পাশে দাঁড়াতে হবে। তাকে বোঝাতে হবে ডিপ্রেশন থেকে বেড়িয়ে আসা সম্ভব। এই ব্যাপারে পরিবারের লোকেদের ভূমিকা অত্যন্ত গূরুত্বপূর্ণ।

সাইকোথেরাপি – এটি টকিং থেরাপি নামেও পরিচিত। সাইকোলজিস্ট কথা বলে রোগীর সমস্যার শিকড়ে গিয়ে তাকে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনে। এর সঙ্গে সি.বি.টি বা কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপিও (cognitive behavioral therapy (CBT)) করতে হবে।

ওষুধের ব্যবহার- ডাক্তার প্রয়োজনে রোগীকে (antidepressants) ওষুধ দিতে পারে। 

বিভিন্ন ধরণের ওষুধের তালিকা

    • serotonin reuptake inhibitors (SSRIs)
    • monoamine oxidase inhibitors (MAOIs)
    • tricyclic antidepressants
    • atypical antidepressants
    • serotonin and norepinephrine reuptake inhibitors (SNRIs)

ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

    • বমি বমি ভাব।
    • পেটের সমস্যা/কোষ্ঠকাঠিন্য।
    • পেট খারাপ।
    • রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়া।
    • ওজন কমে যাওয়া।
    • সেক্স করতে অসুবিধা হওয়া। (sexual dysfunction)

সঠিক পরিমাণে খাবার গ্রহণ

বেশি পরিমাণে মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে শরীর খারাপ হতে পারে। তবে এক গবেষণায় দেখা গেছে যে সঠিক পরিমাণে খাবার খেলে তা মানসিক ও শারীরিক ভাবে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এই খাবারগুলি ডিপ্রেশন কমাতেও অনেক সাহায্য করে।

    • ফল,
    • শাক সবজি,
    • মাছ,
    • অলিভ তেল।

depression

কী ভাবে চিকিৎসা করতে হবে?

যদি কেউ বুঝতে পারে যে তার ডিপ্রেশন হয়েছে তাহলে সে প্রয়োজন মত ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে অথবা কোনো ভালো সাইকোলজিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। 

ডাক্তার প্রয়োজনমত বিভিন্ন ব্যাপার জিজ্ঞাসা করবে যেমন কতদিন ধরে এই উপসর্গগুলো রয়েছে, আরো কী কী সমস্যা হয়, ইত্যাদি। প্রয়োজনে বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষাও করতে দিতে পারে।

পরীক্ষা

বিশেষজ্ঞরা অনেক সময় প্রশ্নের সেট রোগীকে দেয়, রোগীর উত্তরের উপর নির্ভর করে তার ডিপ্রেশনের মাত্রা কতখানি। 

  • The Hamilton Depression Rating Scale এই প্রশ্নাবলীতে ২১ টি প্রশ্ন আছে। এই ২১টি প্রশ্ন- উত্তরের উপর নির্ভর করবে রোগীর মানসিক অবস্থা কেমন।
  • The Beck Depression Inventory এটিও আরেকটা প্রশ্নাবলীর সেট, এই প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমেও বিশেষজ্ঞরা রোগীর বর্তমান মানসিক অবস্থা বুঝতে পারে।

পুরোপুরিভাবে কী সেরে ওঠা সম্ভব?

ডিপ্রেশন থেকে পুরোপুরি ভাবে সেরে ওঠা সম্ভব কীনা তা নির্ভর করবে রোগী মানসিক অবস্থার উপরে। যত তাড়াতাড়ি রোগী চিকিৎসার জন্য আসবে তত তাড়াতাড়ি তার সেরে ওঠার সম্ভাবনাও প্রবল।

সতর্কীকরণ

যদি কোনো কারণে তোমার মনে হয় যে সব কিছুই শেষ, আর কিছুতেই কিছু হওয়ার নয়, তাহলে এখুনি তোমার ঠিকানা অনুযায়ী নিম্নলিখিত ফোন নং এ যোগাযোগ করো।

Delhi: 011-23389090
Kolkata: +913324637401/7432
Srinagar: 18001807020
Hyderabad: +914066202000/2001
Chennai: +914424640050/60
Mumbai: +9122 25521111
Jamshedpur: 0657-6453841/ 6555555
Mumbai: +91226464 3267/ 65653267/ 6565 3247
Goa: 08322252525
Ahmedabad: +91 79 26305544/ 26300222
Kota: 0724 433 3666

Author: Swarna Karmakar

Swarna is an experienced content writer and marketer from Kolkata, India. His amateur interest in psychology, born out of mental health troubles he has experienced himself and among his friends and family, has led him to the dream that is Our Clear Minds. He works as a Senior Content Writer, and enjoys instrumental music and science fiction books in his pass time.